পরীমনি প্রসঙ্গে সরব তসলিমা নাসরিন

পরীমনি প্রসঙ্গে সরব তসলিমা নাসরিন

মাদক নিয়ন্ত্রক আইনের অধীনে আপাতত চার দিনের রিমান্ডে পুলিশ হেফাজতে আলোচিত অভিনেত্রী পরীমনি। বুধবার (৪ আগষ্ট) পরীমনির গ্রেফতারির পর থেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সরব নারীবাদী বিতর্কিত লেখিকা তসলিমা নাসরিন। এক টুইট বার্তায় তসলিমা নাসরিন বলেন, ‘বাংলাদেশে কোনো নারীর বাড়িতে মদ রাখলে, তাকে গ্রেফতার করা হয়।’ টুইটে সরাসরি পরীমনির নাম না নিলেও কোন প্রসঙ্গে এই টুইট তা বুঝে নিতে অসুবিধা হয়নি।

এরপর বৃহস্পতিবার দিনভর পরীমনির সমর্থনে একের পর এক পোস্ট করলেন তসলিমা নাসরিন। পরীমনিকে আদালতে তোলা হলে তসমিলা নাসরিন সরাসরি পরীমনির ঘটনার কথা উল্লেখ করে, বৃহস্পতিবার (৫ আগস্ট) রাতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি স্ট্যাস্টাস দেন।

দীর্ঘ স্ট্যাটাসে তসলিমা নাসরিন লিখেন, ‘র‍্যাবের ব্রিফিং দেখলাম পরীমনিকে নিয়ে। আমি শুধু শুনতে চাইছিলাম কত ভয়ঙ্কর অপরাধ করেছে পরীমনি। অপরাধের মধ্যে যা বলা হয়েছে, তা হলো- ১. পিরোজপুর থেকে ঢাকায় এসে স্মৃতিমনি ওরফে পরীমনি সিনেমায় রাতারাতি চান্স পেয়ে গেছে। ২. তার বাড়িতে বিদেশি মদের বোতল পাওয়া গেছে। ৩. তার বাড়িতে একখানা মিনি বার আছে। ৪. পরীমনি মদ্যপান করে, এখন সে মদে আসক্ত। ৫. নজরুল ইসলাম নামের এক প্রযোজক, যে তাকে সাহায্য করেছিল সিনেমায় নামতে, মাঝে মধ্যে পরীমনির বাড়িতে আসে, মদ্যপান করে। ৬. ডিজে পার্টি হতো পরীমনির বাড়িতে। ৭. আইসসহ মাদকদ্রব্য পাওয়া গেছে (এগুলোর চেহারা অবশ্য দেখানো হয়নি)। ৮. মদ খাওয়ার বা সংগ্রহ করার লাইসেন্স আছে পরীমনির, তবে তার মেয়াদ পার হয়ে গেছে, এখনো রিনিউ করেনি সে। তারপর আরও কিছু খবর দেখলাম, পরীমনি পর্নো ছবির সঙ্গে যুক্ত ছিল। না এটিরও প্রমাণ কিছু দেখানো হয়নি।’

তসলিমার দাবি, ‘মদ খাওয়া, মদ রাখা, ঘরে মিনিবার থাকা কোনোটিই অপরাধ নয়। বাড়িতে বন্ধুবান্ধব আসা, এক সঙ্গে মদ্যপান করা অপরাধ নয়। বাড়িতে ডিজে পার্টি করা অপরাধ নয়। কারও সাহায্য নিয়ে সিনেমায় নামা অপরাধ নয়। কারও সাহায্যে মডেলিংয়ে চান্স পাওয়া অপরাধ নয়। কোনো উত্তেজক ওষুধ যদি সে নিজে সেবন করে অপরাধ নয়। ন্যাংটো হয়ে ছবি তোলাও অপরাধ নয়। লাইসেন্স রিনিউয়েও দেরি হওয়া গুরুতর কোনো অপরাধ নয়।’

তসলিমার প্রশ্ন, এগুলো অপরাধের মধ্যে পড়ে না, তবে কেন অভিনেত্রীকে গ্রেফতার করা হল?

তিনি প্রতিবাদ জানিয়ে লিখলেন, ‘পরীমনি নাকি একাধিক বিয়ে করেছে, সেটিও কোনও অপরাধ নয়। অপরাধ তবে কোথায়? যে অপরাধের জন্য দামি গ্লেনফিডিশ হুইস্কিগুলো বাজেয়াপ্ত করা হলো, মেয়েটাকে গ্রেফতার করা হলো, রিমান্ডে নেওয়া হলো! যে কটা মদ ভর্তি বোতল দেখা গেল পরীমনির বাড়িতে, মদের লাইসেন্সধারীদের বেসমেন্টের সেলারে এর চেয়ে অনেক বেশি থাকে। একটা দুটো পার্টিতেই সব সাবাড় হয়ে যায়। পরীমনি আবার মদ শেষ হয়ে গেলে খালি বোতল জমিয়ে রাখে। বোতলগুলো দেখতে ভালো বলেই হয়তো। কী জানি, এও আবার অপরাধের তালিকার মধ্যে পড়ে কিনা।’

তিনি আরো লিখেন, ‘সত্যিকার অপরাধ খুঁজছি। কাউকে কি জোর করে মাদক গিলিয়েছে, মদ গিলিয়েছে, কারও সঙ্গে প্রতারণা করেছে মেয়েটি? ধাপ্পা দিয়ে ব্যাংকের হাজার কোটি টাকা পকেটে ভরেছে? কাউকে খুন করেছে? অনেকে বলছিল খুব গরিব ঘর থেকে উঠে এসে ধনী হয়েছে পরীমনি। গরিব থেকে ধনী হওয়া পুরুষগুলোকে মানুষ সাধারণত খুব প্রশংসা করে, কিন্তু মেয়ে যদি গরিব থেকে ধনী হয়, তাহলেই চোখ কপালে ওঠে মানুষের। কী করে হলো, নিশ্চয়ই শুয়েছে। যদি শুয়েই থাকে, তাহলে কি জোর করে কারো ইচ্ছের বিরুদ্ধে শুয়েছে? ধর্ষণ করেছে কাউকে? পুরুষেরা যেমন দিন রাত ধর্ষণ করে মেয়েদের, সেরকম কোনও ধর্ষণ? অপরাধ খুঁজছি। নাকি মেয়ে হওয়াটাই সবচেয়ে বড় অপরাধ?

 

আপনি আরও পড়তে পারেন